পুরনো ফিল্ম ক্যামেরা আর লেন্সের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। বিগত পাঁচ বছর ধরে একটা খেরোর খাতায় লিখে রাখি কোনটা কোথা থেকে কি দামে আর কবে এলো, সাথে থাকে আগের মালিকের নাম ঠিকানা আর যদি মনে রাখার মত কিছু বিশেষ তথ্য থাকে, সেটা।

আজ খেরোর খাতাটা উল্টে পাল্টে দেখছিলাম। প্রায় সব কেনার সাথেই কোন না কোন গল্প জড়িয়ে আছে। কিছু আনন্দের, কিছু বেশ দুঃখের। এরই মধ্যে কয়েকটি গল্প বেশ মনে দাগ কাটার মতন, তার মধ্যেই একটা আজ বলছি।
আজ থেকে বছর চারেক আগে, ওএলএক্স এ একটি অ্যাড চোখে পড়ল, অলিম্পাস এর একটি ফিল্ম এস এল আর বিক্রি আছে, সাথে দুটি লেন্স। মডেল বা কি লেন্স কিছুই বলা নেই। চ্যাট করে ফোন নাম্বার জানতে চাইলাম, উত্তর এলো পরের দিন। ফোন করে কথা বললাম আমি। মডেল নাম্বার আর লেন্সের ব্যাপারে জানতে চাইবো, তার আগেই ভদ্রলোক আমায় জিজ্ঞেস করলেন ফিল্ম তো এখন আর কেউ ব্যবহার করে না, তাহলে ওগুলো আমি কেন কিনতে চাইছি? আমি যেটা সত্যি সেটাই বললাম - বললাম যে ফটোগ্রাফি ভালোবাসি আর পুরনো দিনের জিনিস যত্ন করে রাখি। উনি জিগ্গেস করলেন যে কেন রাখেন? আমি বললাম নতুন টেকনোলজি জিনিসকে অপ্রয়োজনীয় করে তোলে বটে, কিন্তু একটি ভালো ভাবে ইঞ্জিনিয়ার্ড জিনিস তার চার্ম কখনোই হারায় না বলে মনে করি। ভদ্রলোক এবার তাঁর ক্যামেরা আর লেন্সের ডিটেইলস দিলেন এবং বাড়ীর ঠিকানাও বললেন। শুধু কত চাইছেন সেটা বললেন না। বললেন আপনি আসুন না, ওটা নিয়ে কোন অসুবিধে হবে না।

ই এম বাইপাসের ওপর হাইরাইজ, তার ১১তলায় এক বিশাল ফ্ল্যাটে থাকেন ভদ্রলোক। ছিপছিপে চেহারা, বুদ্ধিদীপ্ত চোখটি বেশ আকর্ষনীয়। ব্যালকনি আর লিভিং রুম জুড়ে স্টাডি কাম লাইব্রেরী। এত বই একসাথে দেখলে যা হয়, একটু বেসামালই হয়ে গেলাম। ওঁর পারমিশন নিয়ে একটু হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখতে লাগলাম। মার্কেটিং, অ্যাড ফিল্ম মেকিং আর সিনেমাটোগ্রাফির ওপর বেশিরভাগ বই। কৌতূহল হল, জিজ্ঞেস করে জানলাম উনি একজন পেশাদার অ্যাড ফিল্ম মেকার। নিজে আমার জন্যে কফি বানালেন, একেবারে কফি বীন গ্রাউন্ড করে। কফি পান করতে করতে গল্প হল, দুঃখ করছিলেন যে সব কাজই এখন মুম্বাই থেকে আসে।

কফি শেষ হলে উনি ক্যামেরা নিয়ে এলেন। অলিম্পাস ওএম - জি র বডি আর দুটো জুইকো লেন্স; ৫০/১.৮ আর ২৮/৩.৫। এই ২৮/৩.৫ লেন্সটি একটি রত্ন বিশেষ। দাম বেশি নয়, কিন্তু মারাত্মক রকমের শার্প লেন্স, ছবিতে হাত লাগলে কেটে রক্ত পড়বে। সাথে অলিম্পাস ফ্ল্যাশ গান আর একটি ওয়েদার প্রুফ কেস। আমি সাথে ব্যাটারী নিয়ে এসেছিলাম, লাগিয়ে ক্যামেরা চালিয়ে দেখলাম, সব বিলকুল ঠিক আছে। এবার দাম জিজ্ঞেস করলাম। সাথে বেশ কিছুটা ক্যাশ নিয়েই এসেছিলাম। উনি বললেন, এগুলো আমার খুব প্রিয় জিনিস, ব্যবহার হয়না বলে পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে, তাই বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। আপনি সত্যিই ক্যামেরা বোঝেন, ভালোবাসেন। আপনার কাছে এরা যত্নে থাকবে, ভালোবাসায় থাকবে, আপনাকে বিক্রি করতে মন চাইছে না, তবু এমনি নিতে আপনার খারাপ লাগতে পারে, তাই এক হাজার টাকা দিন। আমি বললাম আরে মশাই, আপনার ওয়েদার প্রুফ কেসের দামই ওর চাইতে বেশি হবে, আর একটু বেশি নিন। আমার জীবনে এরকম দরাদরি করতে হবে ভাবিনি। কিন্তু উনি নিজের দাবিতে অটল, কিছুতেই হাজারের বেশি নেবেন না। কি আর করা, ওঁকে টাকা আর ধন্যবাদ দিয়ে, জিনিস নিয়ে নিজের গাড়িতে উঠলাম।

পরে ক্যামেরার সি এল এ করে, ওই লেন্স দিয়ে ছবি তুলে ওঁকে মেইল করে পাঠিয়েছিলাম। লিখেছিলাম - আপনার ছানারা এখানে দিব্যি যত্নে আছে।